অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে হুমকি দিয়েছিলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবারের মধ্যে গাজা উপত্যকা থেকে সকল ইসরাইলি পণবন্দিকে মুক্তি দেয়া না হলে তিনি গাজায় হামলা চালাবেন। কিন্তু হামাস শনিবার মাত্র তিন পণবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং এখনও বহু ইসরাইলি বন্দি তাদের হাতে রয়ে গেছে। এ অবস্থায় ট্রাম্পের সেই হুমকি বাস্তবায়িত না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
ট্রাম্প গত মঙ্গলবার হুমকি দিয়েছিলেন, সকল পণবন্দিকে মুক্তি দেয়া না হলে তিনি গাজার সামনে জাহান্নামের দরজা খুলে দেবেন। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার হামাস কেবল পূর্ব নির্ধারিত তিন ইসরাইলি পণবন্দিকেই মুক্তি দিল।
পার্সটুডে জানাচ্ছে, ইরানের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশ্লেষক মোহাম্মাদ মোহসেন ফায়েজি এ সম্পর্কে লিখেছেন: ট্রাম্পের সুস্পষ্ট হুমকি ও চূড়ান্ত সময়সীমা গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহল তৈরি করে। এমনকি অনেক একথা পর্যন্ত বলে বসেন যে, হামাস যেহেতু একদিনে সকল পণবন্দিকে মুক্ত করবে না তাই গাজা যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার এবং সেখানে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ফায়েজি বলেন: কিন্তু অচিরেই বোঝা গেল জাহান্নামের দেখা মিলছে না। বরং উল্টো গাজা উপত্যকায় প্রবেশকারী ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে গেছে এবং আবু ওবায়দা যেদিন থেকে পণবন্দিদের মুক্ত করার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সেদিন থেকে গাজায় প্রতিদিন গড়ে ৬০০ ট্রাক প্রবেশ করেছে যা ছিল তার আগের দিনগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ।
ইরানি এই বিশ্লেষক তার নিবন্ধে আরো লিখেছেন: হামাস ও তেল আবিবের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে যেসব বার্তা বিনিময় হয়েছে সেসব থেকেও বোঝা যাচ্ছিল, নেতানিয়াহুর প্রতিনিধিদের মধ্যে ট্রাম্পের হুমকি নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না। ট্রাম্প হুমকি দিয়েই অনেকটা দায়িত্ব শেষ করেছেন এবং এরপর শনিবার সকল পণবন্দিকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে কিনা তা নিয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দৃশ্যত তেমন কোনো চাপ ছিল না অথবা চাপ থাকলেও তা পাত্তা দেয়নি হামাস।
এ ব্যাপারে আরেক ইরানি বিশ্লেষক মোহাম্মাদ ঈমানি এক নিবন্ধে লিখেছেন: গাজার প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর শক্তিমত্তায় তেল আবিব এতটা কাবু হয়ে পড়েছে যে, ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ট্রাম্পের আল্টিমেটামকে গুরুত্ব দিতে রাজি হননি। তিনি বরং আগের শিডিউল অনুযায়ী, শনিবার, তিন ইসরাইলি পণবন্দির বিনিময়ে ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। হামাস তিন পণবন্দিকে মুক্তি দেয়ার জন্য হামাসের শহীদ শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাসভবনের সংলগ্ন একটি উন্মুক্ত স্থাপন বেছে নেয়। ওই স্থানে বিশাল ব্যানারে একটি স্লোগান লিখে দেয়া হয়: “গাজাবাসীকে বিতাড়িত করা যাবে না, তারা যদি কোথাও যেতে রাজি হয় তাহলে সেটি জেরুজালেম আল-কুদস।”
ঈমানি বলেন: নেতানিয়াহু ট্রাম্পের বাগাড়ম্বরের চেয়ে হামাস নেতা আবু ওবায়দার হুমকিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বন্দি বিনিময়ের পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন। গাজায় যখন এ ঘটনা ঘটে তখন ট্রাম্প সুস্পষ্টভাবে নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটে গিয়ে বলেন: “ইসরাইলকে এখন এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে শনিবার দুপুর ১২টায় তার কী করবে? ইসরাইল যে সিদ্ধান্তই নেবে তার প্রতি আমাদের সমর্থন থাকবে।”
লেবাননের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ভাষ্যকার রুনি আলফা গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী বাহিনীর প্রায় দেড় বছরের আগ্রাসনের সময় হামাস যোদ্ধাদের দৃঢ় প্রতিরোধের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন: ফিলিস্তিনিরা প্রায় দেড় বছর ধরে প্রাণপণ প্রতিরোধ চালিয়েছে। এই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সমরাস্ত্র হচ্ছে তাদের শরীর এবং গোলাবারুদ হচ্ছে তাদের হাঁড়গোড়। তারা তাদের জীবন বাজি রেখে দখলদার বাহিনীর ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলোতে হামলা চালিয়েছেন।
রুনি আলফা আরো বলেন: ইসরাইলের যে সেনাবাহিনী নিজেকে পশ্চিম এশিয়াসহ গোটা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে দাবি করে সেটি প্রায় দেড় বছর ধরে যুদ্ধ করেও গাজায় জয়লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, এই ভূখণ্ড তাদের নয় এবং এই ভূখণ্ডের ইতিহাসের সঙ্গে দখলদারিত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রতিরোধ যোদ্ধারা আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসেন এবং ইহুদিবাদী সেনাদের পায়ের নীচের মাটি কাঁপিয়ে দেন।
Leave a Reply